জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ মুক্তি পেলেন লন্ডনের বেলমার্শ কারাগার থেকে, স্পেনের উত্তর মারিয়ানা দ্বীপপুঞ্জে আমেরিকার আদালতে আত্মসমর্পণ বুধবারে


Screenshot
মোঃ অহিদুজ্জামান : অবশেষে মুক্তি পেলেন হুইসেল-ব্লোয়িং উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ। তবে নিঃশর্ত মুক্তি নয়, সে প্রশ্নও ওঠে না। আমেরিকার আদালতে আত্মসমর্পণ করে, গুপ্তচরবৃত্তি আইন লঙ্ঘনের অপরাধ স্বীকার করে, গোপনীয় সামরিক তথ্য প্রকাশ করার শর্তেই ব্রিটেনের জেল থেকে মিলেছে মুক্তি। এত বছরের দীর্ঘ আইনি নাটকের অবসান ঘটেছে। 


আজ মঙ্গলবার সকালে জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ মুক্ত হয়েছেন এবং বৃটেন ছেড়েছেন। ফ্লাইট VJT199 এ ব্যাংকক হয়ে স্পেনের উত্তর মারিয়ানা দ্বীপপুঞ্জে যাচ্ছেন তিনি। যেখানে তিনি মার্কিন কমনওয়েলথ অঞ্চলের আদালতে বুধবার হাজিরা দেবেন।

স্পেনের উত্তর মারিয়ানা দ্বীপপুঞ্জের মার্কিন আদালতে আত্মসমর্পণ করে ও দোষ স্বীকার করে, তার নিজ জন্মভূমি অস্ট্রেলিয়ার যাওয়ার পরিকল্পনা আছে সেখান থেকে।


 
যাত্রা মাত্র ছয় ঘন্টার কম হবে বলে আশা করা হচ্ছে।। এ সপ্তাহেই মার্কিন আদালতে হাজির হওয়ার কথা রয়েছে তাঁর। তথ্য বলছে মার্কিন আদালতে তিনি দোষীই সাব্যস্ত হবেন। তবে তাঁর সাজা কমে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে। ব্রিটেনের কারাগারে ইতিমধ্যেই সেই ৫ বছর কাটিয়ে এসেছেন তিনি। তাই এবার তিনি তাঁর জন্মভূমি অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে যাওয়ার অনুমতি পেতেও পারেন।


অ্যাসাঞ্জ ২০০৬ সালে হুইসেল-ব্লোয়িং ওয়েবসাইট উইকিলিকস প্রতিষ্ঠা করেন। ২০১০ সালে তাঁর সংস্থা সারা বিশ্বের বহু বার্তা ফাঁস করে দেওয়ায় পর থেকেই আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক সাড়া পড়ে যায়। সেই সময় মার্কিন সরকারের বহু গোপন বার্তাও ফাঁস করে দেওয়ায় আমেরিকার কোপে পড়েন অ্যাসাঞ্জ। 


এইসময়ে সারা বিশ্বে বাকস্বাধীনতার পক্ষ নেওয়া মানুষের কাছে এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলির কাছে নায়কের মতো পূজনীয় হয়ে উঠেছিলেন অ্যাসাঞ্জ। এবং অন্যদিকে অবধারিত ভাবেই, আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তাকে বিপন্ন করে হয়ে উঠেছিলেন খলনায়ক।


এর পরে ২০১০ সালেই ধর্ষণ ও যৌন হেনস্থার অভিযোগ ওঠায় অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে সুইডেন সরকার। যদিও সেই অভিযোগ অস্বীকার করে অ্যাসাঞ্জ পাল্টা দাবি করেন, মার্কিন সরকারের একাধিক গোপন বার্তা ফাঁস করে দেওয়ার জন্যই তিনি চক্রান্তের শিকার। ২০০৭ সালে ইরাকে একটি মার্কিন হেলিকপ্টার গানশিপের আগুনে বেসামরিক নাগরিকদের নিহত হওয়ার ভিডিও-ও তিনি প্রকাশ করেছিলেন। নিহতদের মধ্যে রয়টার্সের দুই সাংবাদিক ছিলেন। এই সমস্ত কারণেই তিনি আমেরিকার চক্ষুশূল এবং সুইডেন থেকে তাঁকে আমেরিকায় নিয়ে যাওয়া হতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।


শেষমেশ লন্ডন পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণও করেন অ্যাসাঞ্জ। কিন্তু জামিন পাওয়ার পরেই উধাও হয়ে যান। দু’বছর আত্মগোপন করে থাকার পরে, অবশেষে ২০১২ সালে ইকুয়েডরের কাছে রাজনৈতিক পুনর্বাসন পান তিনি। পান কূটনৈতিক রক্ষাকবচও।


তার পর থেকেই লন্ডনে ইকুয়েডরের দূতাবাসে ছিলেন অ্যাসাঞ্জ। অবশেষে ইকুয়েডরে তাঁর নাগরিকত্বের মেয়াদ ফুরোলে, ২০১৯ সালে তাঁকে গ্রেফতার করে জেলে ভরে ব্রিটিশ পুলিশ। শুরু হয়, তাঁকে আমেরিকায় প্রত্যর্পণের প্রক্রিয়া। কিন্তু লন্ডনের উচ্চ-নিরাপত্তা বেলমার্শ কারাগার থেকেই ব্রিটেনের আদালতে প্রত্যর্পণের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই শুরু করেন অ্যাসাঞ্জ। 


২০১০ সালে আফগানিস্তান এবং ইরাকে আমেরিকার সেনা অভিযান সংক্রান্ত ৫ লক্ষ গোপন ফাইল ফাঁস করে দিয়েছিলেন অ্যাসাঞ্জ। মার্কিন সরকারের কম্পিউটার হ্যাক করে ওই গোপন নথি প্রকাশ্যে আনার অভিযোগ রয়েছে অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে। এই কেসে অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে ১৮টি চার্জ রয়েছে। এই নথি প্রকাশের জন্য অ্যাসাঞ্জকে আমেরিকার বিচারব্যবস্থার মুখোমুখি করতে মরিয়া ছিল আমেরিকা ও ব্রিটেন দুই দেশই। কিন্তু ২০২১ সালে লন্ডনের ওল্ড বেইলি কোর্টে নির্দেশ দেওয়া হয়, আমেরিকায় প্রত্যর্পণ করা যাবে না অ্যাসাঞ্জকে। সে সময়ে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছিলেন অ্যাসাঞ্জ। 


কিন্তু শেষমেশ দান উল্টে গেল। ২০২২ সালের জুন মাসে তার প্রত্যর্পণের অনুমোদন দেয় ব্রিটিশ সরকার। একটানা ১৪ বছর ধরে টানাপড়েনের পরে অ্যাসাঞ্জের আমেরিকায় ফেরা হতে চলেছে। তবে প্রত্যর্পণ নয়, আত্মসমর্পণের কারণে ফিরছেন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *