আকাশে হেলিকপ্টার, মাটিতে সশস্ত্র পুলিশ, বিজিবি, আর্মি : ২১০ এর অধিক লাশ, এমনকি ৪ বছর বয়সী শিশু আহাদ  ৮ তলার বারান্দায় মা-বাবার সামনেই গুলিতে লুটিয়ে পড়ে


মোঃ অহিদুজ্জামান (রুমু) : গোলাগুলির শব্দ, সাথে ধাওয়া,পাল্টা-ধাওয়া। এক পক্ষে বিক্ষিপ্ত, নিরস্ত্র কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী ছাত্ররা, অন্য পক্ষে সশস্ত্র পুলিশ, বিজিবি, আর্মি। রাজধানী ঢাকার আকাশে ছিল তাকধারী র্য্যাবের হেলিকপ্টার। এই বাংলাদেশের  চাল-চিত্র। এখনও দেশব্যাপী কারফিউ। 

সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা সংস্কার দাবি যৌক্তিক করার জন্য বর্তমানে সারা দেশে বীরত্বপূর্ণ ছাত্র আন্দোলন চলছে। এ আন্দোলন দ্রুত কল্পনাতীত গতিতে সাধারণের মধ্যে ব্যাপকতা অর্জন করে। অনেক আত্মত্যাগের মাধ্যমে ছাত্ররা এরই মধ্যে রাষ্ট্র ও তার পেটোয়া বাহিনীর বুলেট বোমা উপেক্ষা করে সাহসী ও উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। বর্তমান স্বৈর-সরকারের ক্রাকডাউনে এই আন্দোলনে অকুতোভয় আবু সাঈদ,ফয়সাল আহমেদ শান্ত, মোঃ ওয়াসিম আকরুম, তাহমিদ তামিম, শেখ আসহাবুল ইয়ামিন, জাহিদ্দুজ্জামান তানভিন, ফারহান ফাইয়াজ, ইরফান ভূঁইয়া, মীর মুগ্ধ, শাহ নেওয়াজ ফাহাদ, শাকিল পারভেজ, শেখ ফাহমিন জাফর, জিল্লুর শেখ, দীপ্ত দে, রুদ্র সেন, হাসান মেহেদী, ইমন আহমেদ, সিয়াম, দুলাল মাতবর, মোহাম্মদ, শরীফ হাসান, ইমন মিয়া, শাকিল হাসান, খালিদ হাসান সাইফুল্লাহ, সাব্বির হোসেন, মোহাম্মদ ইমাদ, আসিফ ইকবাল, হৃদয় চন্দ্র তরুয়া, রাহাত হোসেন, সাব্বির হোসেন, ডাঃ সজীব সরকার, আসিফ হাসান, হাসিব ইকবাল, সমুদ্র জামান, এ টি এম তুরাব, নাদিম মিজান, আবদুল গনি, রাকিব, রাসেল, জোবায়ের ব্যাপারী, রেদওয়ান শরীফ রিয়াদ, মনিরুল ইসলাম, ইকরাম হোসেন কাউছার, মারুফ হোসেন, মারুফ হোসাইন, মাহমুদুল হাসান রিজভী, মাহামুদুর রহমান সৈকত, সাফকাত সামির, মাহাবুব হাসান মামুন, জসিম উদ্দিন, মেরাজুল ইসলাম মেরাজ, রিদওয়ান সাগর, মাহফুজুর রহমান মুহিন, আরমান হোসেন রুস্তম, মো: জিহাদ হোসেন, মোহাম্মদ সামি, মোশাররফ হাওলাদার, তাহির জামান প্রিয়, রাকিব হাসান, মুক্তাকিন বিল্লাহ, এমদাদুল হোসেন, আল আমিন, ওমর ফারুক, মোঃ শাকিল হোসেন, মাহাদি হাসান পান্থ, রিয়া গোপ, শেখ শাহরিয়ার সুহার্থ, ওবায়দুল্লাহ, সাফওয়ান রোহান, মানিক মিয়া, মোহাম্মদ মাহীন, শামীম, মোঃ সাগর আহম্মেদ, মো: মাসুদুর রহমান, কোরবান আলী, তামিম, উবায়দুল হক, ফারিদ, কামরুল হাসান রাব্বি, রিয়াজ হোসেন, তৌফিক, মোঃ আহাদুন, আজিজুল, সাইদ, মোঃ মামুন মিয়াহ, মোঃ সাকলাইন, ইমরান খলিফা, ইউসুফ আলী শাওন, আল আমীন হোসেন, মোহাম্মদ তানভীর সিদ্দিকী, ইমতিয়াজ আহমেদ জাবির, শেখ হৃদয় আহমেদ শিহাব, শাহজাহান মিয়া, জুবায়ের আহমেদ, সাজেদুর রহমান, মোহাম্মদ তুহিন, আব্দুল্লাহ আল তাহির, ইমাম হাসান তাঈম, আহসান হাবিব তামিম, আবদুল্লাহ আল আবীর, রোমান বেপারী,  মো: নাসির ইসলাম, মোঃ টিটু হাওলাদার, দুলাল মাহমুদ, নাইমা সুলতানা, সাইফুল ইসলাম, নুরুল আমিন, জোবায়ের হোসেন, ইফাত হাসান, শহীদ রোহান, হোসেন মিয়া, মো: রাজু আহমেদ, জারির আহমেদ দিদাত, বিপ্লব শেখ, আল আমিন, ওয়াদুদ, হুজাইফ নূর হাবিব, গোলাম রব্বানী, আহমেদ সানি, ফুয়াদ মাহমুদ ফাহিম, নবিন তালুকদার, সৈয়দ রাজু, আলমগীর শেখ, আতিকুর হাসান রাব্বি, সরওয়ার হোসেন খান শাউন, মোঃ সুমন, জুবায়ের আহমেদ, রাজন সিকদার, জসিম উদ্দিন, মো: ফারুক, নাইম, মোঃ হাসিব, মোঃ আকাশ, মহাম্মাদ নুরু হুসেন, সাব্বির মল্লিক, সাইমন হোসেন, ইয়ামিন চৌধুরী, আবদুল আহাদ, মো. রাসেল, মো. মাইনুদ্দীন, এহসান হাবিব, এলেম আল ফায়দি, ইয়াছিন সহ আরও অনেকে শহীদ হয়। 


স্থানীয়রা সূত্রে জানা যায়, র‌্যাবের সদস্যরা ঢাকার যাত্রাবাড়ী, মিরপুর ১০ ও ১৩ নম্বর, মোহাম্মদপুর ও ধানমন্ডি ২৭ নম্বর সড়কে ছাত্র আন্দোলনকারীদের ওপর হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালায়।

এই কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভ ও পরবর্তী দমন নীপিড়নে এ পর্যন্ত দেশব্যাপী ২১০ জনেরও বেশী  মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।


সবথেকে কনিষ্ঠ শহীদ আহাদের মৃত্যুর ঘটনাটি এরকমই। মা-বাবার মাঝখানে ৮ তলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে আন্দোলন দেখছিল উৎসুক শিশু আহাদ (৪)। হঠাৎ মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে আহাদ। ছেলেকে ধরে তুলতে গিয়ে রক্তে ভিজে যান বাবা আবুল হাসান ও মা সুমি আক্তার। ছেলেটির ডান চোখে গুলিবিদ্ধ হয়ে মাথার ভেতরে আটকে যায়।

গুরুতর অবস্থায় শিশু আহাদকে ভর্তি করা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। তাকে আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। পরের দিন রাতে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় আহাদ। ঢাকার যাত্রাবাড়ীর রায়েরবাগের একটি ভাড়া বাসায় ১৯ জুলাই বিকালে গুলিবিদ্ধ হওয়ার এ মর্মান্তিক এ ঘটনা ঘটে।

নিহত শিশু আহাদের চাচা মোকলেসুর রহমান জানান, তার ভাই আবুল হাসান রায়েরবাগ এলাকায় ১১তলা ভবনের ৮তলায় স্ত্রী সুমি, বড় ছেলে দিহান মাতুব্বর (১১) ও ছোট ছেলে আহাদকে (৪) নিয়ে বসবাস করতেন। হাসান ঢাকা আয়কর বিভাগে চাকরি করে। গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরের ভাঙ্গার মানিকদাহ ইউনিয়নের পুখুরিয়া গ্রামে।

তিনি আরও জানান, রোববার বিকালে ময়নাতদন্তের পর আহাদের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। সন্ধ্যায় অ্যাম্বুলেন্সে পুখুরিয়ায় নিয়ে আসা হয়। রাতেই বাড়ির পাশে দাফন করা হয় তাকে। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুখুরিয়া এলাকার নিহত শিশু আহাদের নিকট আত্মীয় জানান , আহাদের লাশ ভাঙ্গায় আনতে দিতে চায়নি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। অবশেষে হাসান সরকারি চাকুরে হিসাবে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বলে সন্তানের লাশ গ্রামের বাড়ি আনেন। তারপরও গ্রামের বেশি লোককে না জানিয়ে লাশ দাফন করা হয়। 

উল্লেখ থাকে যে তাদের  কোনো পারিবারিক কবরস্থান ছিল না। নিহত শিশু আহাদকে দাফনের মধ্য দিয়েই এ পারিবারিক কবরস্থানটির যাত্রা শুরু হলো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *